
রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। টানা দশ দিন ধরে তার ফেরার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে পরিবারের সদস্য, দলের নেতাকর্মী এবং দেশের আপামর জনগণ। কিন্তু হাজার মাইল দূরে লন্ডনে অবস্থানরত তার বড় ছেলে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কি মায়ের শিয়রে ফিরতে পারবেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা এখন শুধু একজন সন্তানের মানবিক দায়িত্ব নয়, এটা হয়ে উঠেছে বিএনপির রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকা, আসন্ন নির্বাচনে নেতৃত্বের স্বচ্ছতা এবং দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্যও জরুরি ঘটনা।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় সময় কাটাচ্ছেন। গত ২৮ নভেম্বর হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটার পর থেকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নানা গুঞ্জন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ রটাচ্ছেন, তিনি লাইফ সাপোর্টে আছেন, কেউ বা বলছেন তিনি ভেন্টিলেশনের সাপোর্টে রয়েছেন। যদিও মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, বেগম জিয়া সিসিইউতেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন, চিকিৎসা গ্রহণ করছেন এবং কোনো গুজবে দেশবাসীকে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
একদিকে বেগম খালেদা জিয়ার সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থা, অন্যদিকে হাসপাতালের এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির বাইরে রাজনীতির মাঠে এবং সাধারণ মানুষের মনে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে- মায়ের এই চরম দুঃসময়ে কেন পাশে নেই বড় ছেলে তারেক রহমান? কেন দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে তিনি এখনো দেশের মাটিতে পা রাখতে পারছেন না? যেখানে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, যেখানে তারেক রহমানের ফেরার পথে দৃশ্যত কোনো আইনি বাধা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, সেখানে অদৃশ্য কোন সুতোয় আটকে আছে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন?
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের দেশে ফেরা কেবল বিএনপির জন্য নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রক্ত এবং খালেদা জিয়ার আপসহীনতার উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে একচ্ছত্র ঐক্যের প্রতীক। গত ১৭ বছর ধরে তিনি দলকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম চলছে, তার পূর্ণতা পাবে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। আর সেই নির্বাচনে বিএনপিকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারেক রহমানের উপস্থিতি অপরিহার্য। তিনি না থাকলে নির্বাচন কেন্দ্রিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা এবং দলকে সুসংগঠিত রাখা কঠিন হতে পারে। তাছাড়া তিনি দেশে ফিরলে তা হবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের প্রতীকী বার্তা। ৫ আগস্টের পর তৈরি হওয়া রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক শূন্যতা পূরণ এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় এই মুহূর্তে তারেক রহমানের ফেরাকে ‘অনিবার্য’ হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।


